Table of Contents
Toggleবাংলায় আখেরি চাহার সোম্বা দোয়া : ফজিলত, পরিচিতি, ইতিহাস, গুরুত্ব ও করণীয় 2024
আখেরি চাহার সোম্বা পটভূমি
১১ হিজরির শুরুতে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, যার ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে থাকে। এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, তিনি আর নামাজের ইমামতি করতে পারেন না। মদিনার মুসলিম সম্প্রদায় তাঁর অসুস্থতার খবর শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।
২৮ সফর, সফর মাসের শেষ বুধবার, তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। সেই দিন গোসল করে তিনি মসজিদে যান এবং শেষবারের মতো নামাজের ইমামতি করেন। এই খবরে মদিনার মানুষজন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় এবং নবীজী (সা.)-কে একনজর দেখার জন্য দলে দলে মসজিদে আসে। তাঁরা নবীর সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে এবং দান-সাদকা করে।
মদিনার মানুষের খুশির বহিঃপ্রকাশ ছিল অসাধারণ। কেউ দাস মুক্তি দেন, কেউ অর্থ বা উট দান করেন। আবু বকর সিদ্দিক ৫ হাজার দিরহাম দান করেন, উমর ৭ হাজার, ওসমান ১০ হাজার, আলি ৩ হাজার দিরহাম, এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ ১০০ উট দান করেন।
তবে, ২৯ সফর থেকে মহানবীর (সা.) শারীরিক অবস্থা আবার খারাপ হতে শুরু করে। কিছুদিন পর, ১২ রবিউল আউয়াল, নবীজি (সা.) ইহকাল ত্যাগ করেন, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গভীর বেদনার দিন হিসেবে রয়ে গেছে।
আখেরি চাহার সোম্বার তাৎপর্য
আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে ৬৩ বছর জীবন অতিবাহিত করেন। এই সময়কালে তিনি কখনোই বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হননি। অবিশ্বাসীদের অত্যাচার সহ্য করেও তিনি তাওহিদের বার্তা ছড়িয়ে দিতে নিরলস কাজ করেছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তাকে দুনিয়া ছেড়ে পরকালীন জীবনে প্রবেশ করতে হবে—এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল। তবে মৃত্যুর পূর্বে তিনি রোগে আক্রান্ত হন, যা ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করে। তার অসুস্থতায় উম্মুল মু’মিনীন এবং সাহাবারা গভীর উদ্বেগে পড়ে যান।
সফর মাসের শেষ বুধবারে আল্লাহর রাসূল (সা.) কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেন। তিনি উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা সিদ্দিকা (রা.)-কে ডেকে বলেন, “আয়িশা, আমার কাছে এসো এবং আমার কথা শোনো।” আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) এসে জিজ্ঞাসা করেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমার বাবা-মা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক! আমাকে কেন ডেকেছেন?” রাসূল (সা.) বলেন, “আমার মাথাব্যথা কমেছে এবং আমি কিছুটা সুস্থ বোধ করছি। হাসান, হোসাইন ও মা ফাতিমাকে আমার কাছে নিয়ে এসো।” আয়িশা (রা.) তা করেন এবং রাসূলের মাথায় পানি ঢালেন, তাকে গোসল করান।
এই সুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়লে মদিনার সাহাবীগণ আনন্দিত হন। কেউ দাস মুক্তি দেন, কেউ উট দান করেন, আবার কেউ দান-সাদকা করেন। তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে নামাজ ও দোয়া করেন।
এই দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার, যা “আখেরি চাহার সোম্বা” নামে পরিচিত। “আখেরি” অর্থ শেষ এবং “চাহার সোম্বা” মানে বুধবার। এটি ছিল রাসূলের জীবনের শেষ বুধবার। তবে, পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে তার অসুস্থতা পুনরায় বেড়ে যায়।
মহানবী (সা.) ইতোমধ্যে পরকালের জীবনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন, যেমন একজন মুসাফির দূরের সফরের আগে প্রস্তুতি নেয়। তার বিদায়ের লক্ষণ দেখে সাহাবারা বুঝতে পারেন যে, নবী (সা.) তাদের মাঝে আর বেশিদিন থাকবেন না। উদাহরণস্বরূপ, সেই বছর তিনি রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফ পালন করেন এবং জিব্রাইল (আ.) তাকে পুরো কুরআন দু’বার শোনান। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আজকের দিনে আমি তোমাদের মাঝে একত্রিত হয়েছি, হয়তো এখানেই আমার শেষ সমাবেশ হবে।”
আখেরি চাহার সোম্বা দোয়া, আখেরি চাহার সোম্বা এর দোয়া, আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৪ দোয়া
বাংলায় আখেরি চাহার সোম্বা দোয়া কোরআন ও হাদিসে আখেরি চাহার সোম্বা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বা নির্দেশনার উল্লেখ নেই। এই কারণে, কেউ চাইলে নিজের ইচ্ছামত এই দিনটিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে পারেন। তবে যদি আখেরি চাহার সোম্বার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দোয়া কোথাও পাওয়া যায়, বুঝতে হবে যে সেটি কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে নয়, কারণ কোরআন ও হাদিসে এমন কোনো দোয়া উল্লেখ করা হয়নি।
অনেক মানুষ আছেন যারা আখেরি চাহার সোম্বা পালন করেন, যদিও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই দিনটি পালনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। যারা কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলেন, তারা এই ধরনের বিশেষ দোয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। অন্যদিকে, যারা ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে চলেন না, তাদের মধ্যে অনেকেই এ ধরনের দোয়া তৈরি করেন বা অনুসরণ করেন।
একজন প্রকৃত ইসলাম অনুসারী, যিনি কোরআন ও হাদিস সম্পর্কে সচেতন, সাধারণত আখেরি চাহার সোম্বা পালনের জন্য কোনো বিশেষ দোয়া বা আচার পালন করেন না। তবুও, বিশেষত বাংলাদেশে, অনেকেই এই দিনটিকে বিভিন্ন উৎসবের অংশ হিসেবে পালন করে থাকেন। ইসলামের মূল শিক্ষা অনুযায়ী, শুধুমাত্র কোরআন ও হাদিসে প্রদত্ত দিকনির্দেশনা মেনে চলা উচিত। যেহেতু আখেরি চাহার সোম্বার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি, তাই এ বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকা জরুরি।
আখেরি চাহার সোম্বা গোসলের দোয়া
আখেরি চাহার সোম্বা নামে পরিচিত দিনটির সাথে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া, বিশেষ করে গোসলের দোয়া কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ নেই। তবে সাধারণভাবে যেকোনো গোসলের আগে যে দোয়া পড়া হয়, সেটি আখেরি চাহার সোম্বা গোসলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
সাধারণভাবে, গোসলের আগে এই নিয়ত বা দোয়া করা যেতে পারে:
নিয়ত:“নাওয়াইতুল গুসলা লিরাফইল হাদাসিল আকবার মিনাল জানাবাতি, লিল্লাহি তাআ’লা”অর্থ: “আমি নাপাকী দূর করার জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে গোসলের নিয়ত করছি।”
গোসলের সময় বিসমিল্লাহ বলাও সুন্নাত:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমঅর্থ: “পরম করুণাময়, দয়ালু আল্লাহর নামে।”
কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেকোনো ইবাদত বা আমল শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা উচিত এবং কোরআন ও হাদিসে ভিত্তি না থাকলে নতুন কোনো আমল বা দোয়া সংযোজন করা উচিত নয়।
আখেরি চাহার সোম্বা খাওয়ার দোয়া
আখেরি চাহার সোম্বার জন্য নির্দিষ্ট কোনো “খাওয়ার দোয়া” কোরআন বা হাদিসে উল্লেখ নেই। তবে, ইসলামিক শিক্ষায় খাবার গ্রহণের আগে এবং পরে যেসব দোয়া পড়া হয়, সেগুলো এই দিনেও পড়া যেতে পারে।
খাওয়ার আগে পড়ার দোয়া:
بِسْمِ اللَّهِ وَبَرَكَةِ اللَّهِ“বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহি”অর্থ: “আল্লাহর নামে এবং তাঁর বরকতের সাথে।”
খাওয়ার পর পড়ার দোয়া:
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ“আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়া সাকানা ওয়া জাআলানা মীনাল মুসলিমীন।”অর্থ: “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের আহার করিয়েছেন, পানীয় দিয়েছেন, এবং আমাদের মুসলিম বানিয়েছেন।”
এই দোয়াগুলো যেকোনো দিন খাওয়ার আগে এবং পরে পড়া যায়, এবং আখেরি চাহার সোম্বার দিনেও এগুলো পাঠ করা যেতে পারে।
আখেরি চাহার সোম্বার ইতিহাস
আখেরি চাহার সোম্বার ইতিহাস
আখেরি চাহার সোম্বা হলো ইসলামী বর্ষপঞ্জিকার সফর মাসের শেষ বুধবারের দিন, যা কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। “আখেরি” শব্দের অর্থ হলো শেষ, এবং “চাহার সোম্বা” হলো ফারসি শব্দ, যার অর্থ বুধবার। তাই আখেরি চাহার সোম্বার অর্থ হলো “সফর মাসের শেষ বুধবার”। এই দিনটি মূলত দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চলে মুসলিমদের মধ্যে উদযাপিত হয়, বিশেষ করে উপমহাদেশের কিছু মুসলিম গোষ্ঠীর মধ্যে।
আখেরি চাহার সোম্বার উৎপত্তি
আখেরি চাহার সোম্বার উৎপত্তির বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া কঠিন। ইতিহাসবিদ এবং ইসলামিক পণ্ডিতদের মতে, এর কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় ভিত্তি বা কোরআন ও হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই। তবে এর পিছনে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে, যা অনেকেই বিশ্বাস করেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
একটি প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের শেষ সময়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর অসুস্থতা ক্রমেই বেড়ে ওঠে, এবং সাহাবাগণ ও তার পরিবারের সদস্যরা তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগে পড়েন।
ধারণা করা হয় যে, সফর মাসের শেষ বুধবারে মহানবী (সা.) কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেন এবং সেই সময় কিছু ইবাদত ও গোসল করেন। সেই দিন মহানবী (সা.)-এর সামান্য সুস্থতা দেখে সাহাবারা খুশি হয়ে দান-সাদকা করেন এবং দোয়া পড়েন। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, সেই বুধবারে মহানবী (সা.)-এর সুস্থতা ছিল আল্লাহর বিশেষ করুণা, যা তার পরবর্তী সময়ে আসন্ন ইন্তেকালের জন্য একটি আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি ছিল। এরপর, ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেন।
আখেরি চাহার সোম্বার পালন
দক্ষিণ এশিয়ার কিছু মুসলিম সম্প্রদায়, বিশেষত উপমহাদেশের মুসলিমরা, আখেরি চাহার সোম্বা পালন করে থাকেন। এই দিনটি মূলত দোয়া, ইবাদত, দান-সাদকা এবং বিশেষ গোসলের মাধ্যমে পালিত হয়। অনেকেই এই দিনে রোজা রাখেন এবং মহানবী (সা.)-এর সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন। কিছু মানুষ বিশেষ খাবার রান্না করে গরিব ও মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, এই দিনটির ইবাদত বিশেষ বরকত এবং কল্যাণ বয়ে আনে।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন
ইসলামের মূল ভিত্তি হলো কোরআন এবং হাদিস। আখেরি চাহার সোম্বা পালন বা এর জন্য নির্দিষ্ট দোয়া পড়ার নির্দেশনা কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় না। ফলে অনেক ইসলামিক পণ্ডিত এই দিনের পালনকে একটি ঐতিহ্যগত বা সংস্কৃতিক প্রথা হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন, যা কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনার বাইরে। কিছু পণ্ডিত মনে করেন যে, আখেরি চাহার সোম্বার কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক গুরুত্ব নেই এবং এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করা সুন্নাহর বিপরীতে যেতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে দোয়া এবং ইবাদত
ইসলামের মূল শিক্ষায় ইবাদত-বন্দেগী এবং দোয়া শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয় এবং এর ভিত্তি কোরআন ও হাদিসের ওপর নির্ভর করে। কোরআন ও হাদিসে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলে কোনো বিশেষ দিনে দোয়া বা ইবাদতের জন্য নতুন আমল সংযোজন করা উচিত নয়। আখেরি চাহার সোম্বার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দোয়া বা ইবাদতের নির্দেশনা না থাকায়, এই দিনটি পালন করা ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে যারা এই দিনটিকে পালনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আমল করেন, তারা সাধারণত ঐতিহ্যগত প্রথা অনুসরণ করেন।
উপসংহার
আখেরি চাহার সোম্বা হলো একটি ঐতিহ্যবাহী দিন, যা কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষভাবে পালিত হয়। যদিও এর পেছনে ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় কিছু প্রেক্ষাপট রয়েছে, কোরআন ও হাদিসের নির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি না থাকায় এই দিনটির পালন নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। ইসলামিক পণ্ডিতদের মতে, কোরআন ও হাদিসের নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়া কোনো আমল বা ইবাদতকে ধর্মীয় নির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। তাই মুসলিমদের উচিত কোরআন ও হাদিসের মূল শিক্ষার প্রতি অটল থেকে ইবাদত ও দোয়া করা।
আখেরি চাহার সোম্বার পালন বা এদিনের বিশেষ ইবাদত কোরআন ও হাদিসের নির্দেশিত পদ্ধতিতে না থাকলেও, যারা এটি পালন করেন, তাদের বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। ইসলামিক মূল্যবোধের প্রতি সত্যিকার অর্থে অটল থাকতে হলে কোরআন ও হাদিসের নির্দেশিত পথেই থাকা জরুরি, যা একজন মুসলিমকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়ক হয়।
আখেরি চাহার সোম্বা উদযাপন
আখেরি চাহার সোম্বা: ইতিহাস ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট
সফর মাসের শেষ বুধবার, যাকে ‘আখেরি চাহার সোম্বা’ হিসেবে পরিচিত, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিশেষ একটি দিন হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘ অসুস্থতার পর সাময়িক সুস্থতার দিন হিসেবে স্মরণ করা হয়। ইসলামিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, মহানবী (সা.)-এর এই সাময়িক সুস্থতা উপলক্ষে মুসলিমরা দোয়া, ইবাদত, দান-খয়রাত ও বিশেষ খাবার প্রস্তুতির মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে থাকেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিমরা রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই দিনটি যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করেন। বিশেষ করে, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আখেরি চাহার সোম্বা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অঞ্চলের সুফি-সাধকরা এবং দিল্লি সালতানাতের শাসকগণ এই দিনটি রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পালন করতেন। তারা এই দিনে বিশেষ আমল ও দান-খয়রাতের মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর সুস্থতা স্মরণ করতেন এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন।
পারস্য প্রভাবিত অঞ্চল ও ভারতীয় উপমহাদেশে বহু যুগ ধরে ‘আখেরি চাহার সোম্বা’ পালিত হয়ে আসছে। ঐতিহাসিকভাবে, এই দিনটি মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং অনেক মুসলিম পরিবার ও সম্প্রদায় এ দিনটি উদযাপন করে এসেছে। যদিও এই দিনটির কোরআন ও হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই, তবুও এটি ঐতিহ্যগতভাবে পালন করা হচ্ছে, যা একটি সাংস্কৃতিক প্রথার রূপ নিয়েছে।
বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী একযোগে আখেরি চাহার সোম্বা পালন না হওয়ায়, কিছু মুসলিম ধর্মজ্ঞ ও পণ্ডিতরা এই দিনটির উদযাপন ও তাৎপর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাদের বক্তব্য হলো, আখেরি চাহার সোম্বা পালনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট হাদিসের দলিল নেই এবং সাহাবায়ে কেরাম এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করেছেন এমন সুনির্দিষ্ট তথ্যও নেই। ফলে, তারা মনে করেন, যেহেতু সাহাবায়ে কেরামদের যুগ ও পরবর্তী সময়ে এই দিনটির কোনো বিশেষ গুরুত্ব ছিল না, তাই আখেরি চাহার সোম্বা ঘটা করে পালনের কোনো ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক যৌক্তিকতা নেই।
তবে, এই দিনটি পালনকারী মুসলিমদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষে দান-খয়রাত ও ইবাদত করলে ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়। তারা মনে করেন যে, এই দিনটি উপলক্ষে নফল নামাজ পড়া, গরিব-দুঃখীদের মাঝে দান করা, এবং অন্যান্য ভালো কাজ করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও নৈতিকতা অনুসারে। কিছু মুসলিম সম্প্রদায় এই দিনটিকে বিভিন্ন ধরনের ইবাদত, বিশেষ খাবার প্রস্তুতি, এবং গরিবদের মধ্যে দান করার মাধ্যমে উদযাপন করে থাকেন, যা তাদের বিশ্বাসে এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
এই প্রেক্ষাপটে, যদিও আখেরি চাহার সোম্বার পালনের কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় নির্দেশনা কোরআন ও হাদিসে নেই, উপমহাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত উৎসব হয়ে উঠেছে। ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী, সকল ইবাদত ও আমল কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে হওয়া উচিত, তবে ঐতিহ্যগত প্রথা ও সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু বিষয় পালন করা হয়ে থাকে। তাই, মুসলিমদের উচিত ইসলামের মৌলিক শিক্ষার প্রতি অটল থেকে এবং ধর্মীয় নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ইবাদত করা।
আখেরি চাহার সোম্বার উদযাপন মুসলিমদের মধ্যে একটি বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচিত হলেও, এটি কোনো ধর্মীয় প্রথার অংশ না হলেও এর মাধ্যমে সৃষ্ট কল্যাণ, দান, ও ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ পরিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়। এটি সমাজের মধ্যে সদ্ভাবনা ও সহযোগিতার মনোভাব জাগ্রত করতে সহায়ক হতে পারে।
আখেরি চাহার সোম্বা ফজিলত
আখেরি চাহার সোম্বা ইসলামী ক্যালেন্ডারের চাহার সোম্বা বা বুধবারের শেষ দিন। মুসলিম সমাজে এই দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি সাধারণত দোয়া ও ইবাদতের জন্য ব্যবহৃত হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই দিনের কিছু ফজিলত বা গুরুত্ব থাকতে পারে।
তবে, আখেরি চাহার সোম্বার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ও সাহাবাদের ব্যাখ্যা অনুসারে, এই দিনের গুরুত্ব ভিন্ন হতে পারে। বিস্তারিত তথ্য বা ব্যাখ্যার জন্য ধর্মীয় স্কলার বা ইসলামিক পণ্ডিতের সাথে আলোচনা করা সুবিধাজনক হতে পারে।
আখেরি চাহার সোম্বা করণীয়
আখেরি চাহার সোম্বা পালনকালে মুসলিমরা সাধারণত বিশেষ দোয়া ও ইবাদত করে থাকেন। এই দিনটি উপলক্ষে নফল নামাজ পড়া, আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং দান-খয়রাত করা প্রথাগত কাজ। কিছু মুসলিম ব্যক্তি এই দিনে গরিবদের সহায়তা করে থাকেন, যেমন খাদ্য বিতরণ বা অন্যান্য সাহায্য। যদিও কোরআন ও হাদিসে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব উল্লেখ নেই, তবুও অনেকেই এটি ধর্মীয় অনুভূতি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী পালন করেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, ইবাদত ও দান-খয়রাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রচেষ্টা করা হয়।
আখেরি চাহার সোম্বা কেন, আখেরি চাহার সোম্বা কেন পালন করা হয়
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে আখেরি চাহার সোম্বা একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তাঁর ইহজগত ত্যাগের আগে, এই দিনে তিনি কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেছিলেন। ফারসিতে “আখেরি চাহার সোম্বা” মানে “শেষ চতুর্থ বুধবার” এবং এই দিনটি নবীজীর পার্থিব জীবনের শেষ সময়ে সাময়িক আরোগ্য লাভের দিন হিসেবে স্মরণ করা হয়।
এই দিনটির স্মরণে, মুসলমানরা প্রতি বছর ‘শুকরিয়া দিবস’ হিসেবে পালন করেন। তারা এই দিনে বিশেষভাবে নফল ইবাদত ও বন্দেগি করে থাকেন। দিনটি ধর্মীয় অনুভূতি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়, যা নবীর প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক।
আখেরি চাহার সোম্বা উম্মতে মুহাম্মদির আধ্যাত্মিক জীবনে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এই দিনে ইবাদত ও দান-খয়রাতের মাধ্যমে মুসলমানরা নবীর জীবন ও teachings কে সম্মান জানিয়ে আল্লাহর কাছে আরো নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করেন।
আখেরি চাহার সোম্বা কি সরকারি ছুটি
এই দিনে সরকারি ও কিছু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এদিন বন্ধ থাকে, এবং অফিস-আদালতে এটি ঐচ্ছিক ছুটির দিন হিসেবে বিবেচিত হয়।