Table of Contents
Toggleআখেরি চাহার সোম্বার ইতিহাস
আখেরি চাহার সোম্বার মুসলমানদের একটি বিশেষ ধর্মীয় দিন, যা ইসলামিক বর্ষপঞ্জির সফর মাসের শেষ বুধবার পালন করা হয়। এটি মূলত হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সুস্থতার জন্য প্রার্থনার দিন হিসেবে বিবেচিত হয়, যিনি সেই সময় অসুস্থ ছিলেন। এই দিনে মুসলমানরা নামাজ আদায় ও দোয়া করে থাকেন।
আখেরি চাহার সোম্বার ইতিহাস
আখেরি চাহার সোম্বার হলো ইসলাম ধর্মের একটি বিশেষ দিন, যা মুসলিমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে। “আখেরি” শব্দটি আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থ “শেষ,” এবং “চাহার” ফার্সি শব্দ, যার অর্থ “চার” বা “চতুর্থ,” আর “সোম্বা” অর্থাৎ “বুধবার।” এই দিনটি হিজরি বর্ষপঞ্জিকার চব্বিশতম বা পঁচিশতম রমজানের পরের চতুর্থ বুধবার পালিত হয়, যা সাধারণত ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আরোগ্য লাভের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আখেরি চাহার সোম্বারের ইতিহাস:
ইসলামের প্রচলিত ইতিহাস অনুসারে, নবী মুহাম্মদ (সা.) জীবনের শেষ দিকে একটি গুরুতর অসুস্থতার শিকার হয়েছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা যখন খুবই খারাপ হয়ে পড়েছিল, তখন তিনি আল্লাহর কাছে আরোগ্যের দোয়া করেন। এই দোয়া করার পরদিন তিনি আরোগ্য লাভ করেন। এই দিনটি ছিল হিজরি ক্যালেন্ডারের সফর মাসের শেষ বুধবার। নবীর (সা.) আরোগ্য লাভের এই ঘটনাকে স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় এই দিনটিকে আখেরি চাহার সোম্বার হিসাবে পালন করে থাকে।
আখেরি চাহার সোম্বার পালনের রীতি:
- নামাজ ও দোয়া: এই দিনে বিশেষ দোয়া ও নামাজ আদায় করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনটি দোয়া কবুলের বিশেষ দিন।
- পবিত্রতা ও স্নান: অনেক মুসলিম এই দিনে পবিত্র স্নান করে নিজেদের পবিত্র করেন এবং তাদের ঘর-বাড়িকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।
- দান-খয়রাত: আখেরি চাহার সোম্বারে দান-খয়রাত করা হয়। অভাবী ও দরিদ্রদের সাহায্য করা হয় এই দিনটির বিশেষ অংশ হিসাবে।
- মিষ্টি বিতরণ: আখেরি চাহার সোম্বার উপলক্ষে মিষ্টি তৈরি ও বিতরণ করা হয়। পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করার মাধ্যমে আনন্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করা হয়।
উপসংহার:
আখেরি চাহার সোম্বার মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পবিত্র দিন, যা নবী মুহাম্মদ (সা.) এর আরোগ্য লাভের স্মরণে পালিত হয়। এই দিনটির পালন শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্বেরও প্রতীক হয়ে ওঠে।
আখেরি চাহার সোম্বারের নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে
আখেরি চাহার সোম্বার শব্দটি আরবি ও ফার্সি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। “আখেরি” শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ “শেষ” এবং “চাহার” শব্দটি ফার্সি ভাষায় “চার” বা “চতুর্থ” বোঝায়। “সোম্বা” অর্থ “বুধবার”। এভাবে আখেরি চাহার সোম্বার অর্থ দাঁড়ায় “শেষ চতুর্থ বুধবার”। এই নামকরণের মূল কারণ হলো, এটি হিজরি বর্ষপঞ্জিকার সফর মাসের শেষ বুধবার পালিত হয়। এই দিনটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আরোগ্য লাভের স্মরণে পালন করা হয়, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব পায়।
আখেরি চাহার সোম্বার মুসলিমদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ
আখেরি চাহার সোম্বার মুসলিমদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) এর আরোগ্য লাভের স্মৃতিবহ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, নবী (সা.) জীবনের শেষের দিকে এক গুরুতর অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই সময় তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, এবং পরবর্তীতে তিনি আরোগ্য লাভ করেন। তার এই আরোগ্য লাভের ঘটনাকে স্মরণ করে আখেরি চাহার সোম্বার পালন করা হয়। মুসলিমরা মনে করেন যে, এই দিনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং পূজা অর্চনা করা বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হয়। তাই, এই দিনটি মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আখেরি চাহার সোম্বারের দিনে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর কোন ঘটনা স্মরণ করা হয়
আখেরি চাহার সোম্বারের দিনে মূলত নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আরোগ্য লাভের ঘটনা স্মরণ করা হয়। হাদিস ও ইসলামী ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে, নবী মুহাম্মদ (সা.) জীবনের শেষ সময়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন তিনি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। এই দোয়ার পরেই তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই ঘটনাটি সফর মাসের শেষ চতুর্থ বুধবার সংঘটিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। সেই স্মৃতিতে মুসলিম সম্প্রদায় আখেরি চাহার সোম্বার পালন করে থাকে।
আখেরি চাহার সোম্বার পালনের প্রচলিত রীতিনীতি কী কী
আখেরি চাহার সোম্বার পালনের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু প্রচলিত রীতিনীতি রয়েছে। প্রথমত, এই দিনে মুসলিমরা বিশেষ নামাজ আদায় করে থাকেন, যা নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সুস্থতা এবং শান্তির জন্য করা হয়। দ্বিতীয়ত, এই দিনে পবিত্র স্নান করার একটি প্রচলন রয়েছে, যা ব্যক্তিগত পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতার প্রতীক। তৃতীয়ত, মুসলিমরা আখেরি চাহার সোম্বারের দিন দান-খয়রাত করে থাকেন, বিশেষ করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করা হয়। এছাড়াও, এই দিনে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ এবং বিভিন্ন ধরনের বিশেষ খাবার তৈরি করার রীতি রয়েছে, যা আনন্দ ও সমৃদ্ধি প্রদর্শনের একটি মাধ্যম।
আখেরি চাহার সোম্বার কবে পালিত হয় এবং এর সাথে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে
আখেরি চাহার সোম্বার হিজরি ক্যালেন্ডারের সফর মাসের শেষ চতুর্থ বুধবার পালিত হয়। এই দিনটি ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আরোগ্য লাভের একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে পালিত হয়। ঐতিহাসিকভাবে, নবী (সা.) এই দিনে গুরুতর অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলেন, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি মহৎ ঘটনা। তাই, আখেরি চাহার সোম্বার দিনটিকে ইসলামের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত পবিত্র এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়।