Table of Contents
Toggleআখেরি চাহার সোম্বা ফজিলত
আখেরি চাহার সোম্বার ফজিলত হলো এই দিনে মহানবী (সা.) তাঁর শেষ অসুস্থতা থেকে সাময়িকভাবে আরোগ্য লাভ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এই দিনটিতে নফল নামাজ, দোয়া, জিকির, এবং কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
আখেরি চাহার সোম্বা ফজিলত
আখেরি চাহার সোম্বা হলো ইসলামিক ক্যালেন্ডারের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা পবিত্র হিজরি বছরের সফর মাসের শেষ বুধবার পালন করা হয়। মুসলমানরা এই দিনটিকে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুস্থতার স্মরণে পালন করে থাকেন। আখেরি চাহার সোম্বার ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
- নবী করিম (সা.)-এর সুস্থতার স্মৃতি: আখেরি চাহার সোম্বা পালিত হয় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুস্থতার স্মরণে। বলা হয়ে থাকে যে, সফর মাসের শেষ বুধবার মহানবী (সা.) অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলেন। এই উপলক্ষে মুসলিমরা মহানবী (সা.)-এর সুস্থতার জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে থাকেন।
- ইবাদত ও দোয়া: এই দিনে মুসলমানরা বিশেষ দোয়া ও ইবাদত করে থাকেন। অনেকেই কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ পড়া এবং আল্লাহর দরবারে নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য দোয়া করে থাকেন।
- রোজা রাখা: আখেরি চাহার সোম্বার দিন রোজা রাখারও বিশেষ ফজিলত রয়েছে। অনেক মুসলিম এই দিনে রোজা রেখে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে থাকেন।
- পরোপকারের কাজ: অনেক মুসলমান এই দিনে গরিব ও দুস্থদের মাঝে দান-খয়রাত করে থাকেন। আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষে দান-সদকা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন।
- শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া: আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষে মুসলিমরা বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যও দোয়া করে থাকেন। এই দিনে মহানবী (সা.)-এর সুস্থতার স্মৃতি মেনে সবার মঙ্গল কামনা করা হয়।
এই দিনটি মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে পালিত হয় এবং এটি তাদের আধ্যাত্মিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আখেরি চাহার সোম্বার দিন রোজা রাখার ফজিলত কী
আখেরি চাহার সোম্বা অর্থাৎ সফর মাসের শেষ বুধবার মুসলিম সমাজে একটি বিশেষ দিন হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে রোজা রাখার কিছু বিশেষ ফজিলত রয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- গুনাহ থেকে মুক্তি: এই দিনে রোজা রাখলে অতীতের ছোটখাটো গুনাহ ক্ষমা পাওয়া যায়। অনেক ইসলামিক পণ্ডিতরা মনে করেন, এই রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার রহমত লাভ করা সম্ভব।
- বরকত লাভ: আখেরি চাহার সোম্বার রোজা পালন করলে ব্যক্তি তার জীবনে বরকত ও কল্যাণ লাভ করতে পারে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এই দিনটি বিশেষ দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব।
- নবীজি (সা.)-এর সুন্নাত: বলা হয় যে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সফর মাসের শেষ বুধবারে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলেন। তাই এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করার মাধ্যমে আমরা নবীজির সুন্নাত অনুসরণ করতে পারি।
- সওয়াব বৃদ্ধি: এই রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি সওয়াব অর্জন করা যায়, যা পরকালে মুমিনের জন্য বিশেষ উপকার বয়ে আনবে।
আখেরি চাহার সোম্বার দিনটি মুসলিম সমাজে বিশেষ একটি তাত্পর্যপূর্ণ দিন হিসেবে গণ্য হয়, এবং এই দিনটি রোজা, দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা হয়।
আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি সুন্নত
আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা সম্পর্কে ইসলামের মূল গ্রন্থসমূহে সরাসরি কোনো সুন্নতের নির্দেশনা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, এটি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সরাসরি কোনো আদেশ বা কাজের অনুসরণ হিসেবে সুন্নত নয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে বা সাহাবায়ে কেরামের সময়ে এই দিনের বিশেষ পালন সম্পর্কে তেমন কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না।
তবে, কিছু মুসলিম সমাজে এটি পালন করা হয় এবং তারা মনে করেন যে এটি এক ধরনের নফল ইবাদত, যা অতিরিক্ত সওয়াবের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। এই দিনে বিশেষ দোয়া, নামাজ বা রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি:
- সুন্নত নয়: আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা সরাসরি সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয় না, কারণ নবীজি (সা.) এই দিনের কোনো বিশেষ আমল নির্দেশ করেননি বা নিজে পালন করেননি।
- নফল ইবাদত: কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় এই দিনটিতে নফল ইবাদত করতে চায়, তবে তা করা যেতে পারে, তবে এটিকে বাধ্যতামূলক বা সুন্নত হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়।
- বিশ্বাসের ভিত্তি: যে কোনো ইবাদত বা আমল পালন করার সময় তা যদি ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং কোনো শিরক বা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত না হয়, তবে তা পালন করা যেতে পারে।
সর্বোপরি, আখেরি চাহার সোম্বা পালন করার পূর্বে ইসলামের মূল শিক্ষার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত এবং বিদআত থেকে বিরত থাকা উচিত। ইবাদতের সকল কাজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য থাকা প্রয়োজন।
আখেরি চাহার সোম্বার সঙ্গে সফর মাসের কী সম্পর্ক রয়েছে
আখেরি চাহার সোম্বা এবং সফর মাসের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আখেরি চাহার সোম্বা শব্দটি এসেছে “আখেরি” অর্থাৎ শেষ, “চাহার” অর্থাৎ চার, এবং “সোম্বা” অর্থাৎ বুধবার। এটি সফর মাসের শেষ বুধবারকে নির্দেশ করে। ইসলামের হিজরি বর্ষপঞ্জিতে সফর মাস হলো দ্বিতীয় মাস, এবং আখেরি চাহার সোম্বা এই মাসের শেষ বুধবার পালিত হয়।
আখেরি চাহার সোম্বার সঙ্গে সফর মাসের সম্পর্ক:
- নবীজি (সা.)-এর আরোগ্য লাভ: প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, সফর মাসের শেষ বুধবারে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলেন। এই ঘটনার স্মরণে আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা হয়। যদিও এই ঘটনার সনাক্তযোগ্য প্রমাণ ইসলামের প্রাথমিক উৎসসমূহে পাওয়া যায় না, তবে কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ে এটি পালনের প্রচলন রয়েছে।
- বিশেষ দোয়া ও ইবাদত: আখেরি চাহার সোম্বার দিনে অনেক মুসলিম সফর মাসের বিশেষ ফজিলত এবং নবীজির (সা.) আরোগ্য লাভের কারণে এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করে থাকেন। এই দিনে তারা দোয়া, নফল নামাজ এবং রোজা পালন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।
- সফর মাসের কুসংস্কার: প্রাচীনকালে আরব সমাজে সফর মাসকে অপয়া মনে করা হতো এবং এই মাসের সাথে বিভিন্ন কুসংস্কার জড়িত ছিল। ইসলামে এই ধরনের কুসংস্কার গ্রহণযোগ্য নয়। আখেরি চাহার সোম্বা পালনের মাধ্যমে অনেকে এসব কুসংস্কার দূর করতে চান এবং আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করেন।
- বরকত লাভের আশা: সফর মাসের শেষ বুধবারে বিশেষ ইবাদত পালন করে অনেকে জীবনে বরকত ও কল্যাণ লাভের আশা করেন। এটি মূলত এক ধরনের নফল ইবাদত হিসেবে পালন করা হয়।
সফর মাসের শেষ বুধবার বা আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা মূলত একটি ঐতিহ্য এবং এটি কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত। তবে ইসলামের মূল শিক্ষায় এই ধরনের প্রথার সরাসরি কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় না। ইসলামে যে কোনো ধরনের ইবাদত এবং প্রথা পালনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ।