Table of Contents
Toggleআন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৪: সাক্ষরতার গুরুত্ব ও উদযাপন
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্বজুড়ে ৮ই সেপ্টেম্বর উদযাপিত হবে। এটি এমন একটি দিন যা কেবল শিক্ষার অধিকারকেই নয়, বরং সমাজে আমাদের সামগ্রিক অগ্রগতির প্রতিও একটি প্রতিশ্রুতি। কীভাবে? সাক্ষরতা এমন একটি হাতিয়ার যা শুধু কাগজে-কলমে শব্দ লিখতে বা পড়তে জানার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এটা যোগাযোগ, নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা এবং আমাদের ভবিষ্যৎকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা দেয়।
আমার মনে আছে যখন আমি প্রথম সাক্ষরতার শক্তি অনুভব করলাম—এটি কেবল শিক্ষার সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে ছিল না, বরং এটি একটি জীবনের পথনির্দেশক। এটি মানুষকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে, সমাজে নিজের স্থান সম্পর্কে জানায় এবং আরও ভাল ভবিষ্যতের জন্য পথ খুঁজে বের করার ক্ষমতা দেয়। কিন্তু, এখনও প্রায় ৭৭৪ মিলিয়ন মানুষ এই ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত। আমি কল্পনা করতে পারি না, একজন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যদি পড়তে না পারতাম, কেমন লাগত।
সাক্ষরতার সংজ্ঞা ও তাৎপর্য
কেবলমাত্র পড়া ও লেখা জানলেই একজন সাক্ষরজ্ঞানী হয়ে ওঠে না। সাক্ষরতার অর্থ অনেক গভীর। এটি মানুষের জীবনকে এমনভাবে বদলাতে পারে যা আমরা ভাবতেও পারি না। ধরুন, একজন ছোট্ট গ্রামের নারী যিনি একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে চান—তিনি যদি মৌলিক অর্থে শিক্ষিত না হন, তবে তার পক্ষে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা, ঋণ পেতে আবেদন করা বা নিজের হিসাব ঠিকভাবে রাখা অসম্ভব হবে। সাক্ষরতার এই গুরুত্বকে আমরা অবহেলা করতে পারি না।
আরও মজার ব্যাপার হলো, সাক্ষরতা কেবলমাত্র ব্যক্তিগত উন্নতির ক্ষেত্রেই নয়, এটি সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতিতেও অপরিহার্য। সাক্ষর জ্ঞান ছাড়া, একজন ব্যক্তি পুরোপুরি তার অধিকারগুলো বুঝতে পারে না বা সেগুলি দাবি করতে পারে না। এক্ষেত্রে, সাক্ষরতার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক অবস্থানও পরিবর্তিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের ইতিহাস
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস প্রথমবার ১৯৬৬ সালে UNESCO কর্তৃক প্রবর্তিত হয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল একটিই—বিশ্বব্যাপী সাক্ষরতার মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তখন থেকেই এই দিনটি একটি বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে আসছে—“সাক্ষরতা মানবাধিকারের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।”
প্রতিবছর, দিবসটির জন্য একটি নির্দিষ্ট থিম নির্বাচন করা হয়, যা সাধারণত সংশ্লিষ্ট বছরের সামাজিক বা বৈশ্বিক বাস্তবতার সাথে মিল রেখে নির্ধারণ করা হয়। ২০২৩ সালের থিম ছিল ‘Promoting Literacy for a World in Transition’। আমি মনে করি, এটা ছিল একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী থিম, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন পুরো বিশ্ব একটি দুর্বিষহ মহামারী পার করেছে এবং এখন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
বর্তমান বিশ্বে সাক্ষরতার অবস্থা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাক্ষরতার হার সমান নয়। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৯%, সেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই হার অনেক কম। বিশ্বব্যাপী সাক্ষরতার সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনো প্রায় ২৫৮ মিলিয়ন শিশু ও যুবক বিদ্যালয়ে যায় না এবং এই সংখ্যা কেবলমাত্র স্কুল থেকে বঞ্চিত শিশুদের প্রতিফলিত করে। অনেকে জীবনের নানা পর্যায়ে এসে শিক্ষার এই অভাবটুকু পূরণ করতে পারে না, যা তাদের সামাজিক, আর্থিক ও পেশাগত জীবনে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকে যায়।
এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশটি গড়ে ওঠে লিঙ্গ বৈষম্য থেকে। আপনি কি জানেন, মহিলারা এখনও শিক্ষার ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন? বিশ্বে প্রতি পাঁচ জন সাক্ষরতার অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে তিন জনই নারী। এটা আমাদের সমাজের এক গভীর বাস্তবতা। এই বিষয়ে কাজ করা একান্ত প্রয়োজন।
ডিজিটাল সাক্ষরতার গুরুত্ব
এই ডিজিটাল যুগে, সাক্ষরতা আর কেবল পেন-এন্ড-পেপারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এখন শিক্ষা হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, যেখানে ইন্টারনেটের ক্ষমতা ব্যবহার করে শিক্ষাকে সব স্থানে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। যদি আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন, তবে আপনি বিশ্বের প্রায় সকল তথ্যের সাথে সংযুক্ত হতে পারেন। ডিজিটাল সাক্ষরতা হল এই যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে একটি, কারণ এটি কাজের জগত, অর্থনীতি এবং শিক্ষার সকল ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে।
উদাহরণস্বরূপ, COVID-19 মহামারীর সময় আমরা দেখেছি কিভাবে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাপনা আমাদের শিশুদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে সহায়তা করেছে। যখন স্কুলগুলি বন্ধ ছিল, তখন ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল ডিজিটাল সাক্ষরতার দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপন: কিভাবে অংশগ্রহণ করবেন
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের উদযাপনে আমি এবং আপনি উভয়েই অংশ নিতে পারি। এ বছর, আপনি কিভাবে উদযাপন করবেন? বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং কমিউনিটি সেন্টারে সাক্ষরতা বিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং শিক্ষামূলক সেমিনার বা ওয়েবিনারে অংশ নেওয়াও ভাল উপায় হতে পারে।
এমনকি আপনি নিজেও নিজের এলাকায় সাক্ষরতার গুরুত্ব নিয়ে একটি ছোট্ট আড্ডার আয়োজন করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে এমন প্রোগ্রাম আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষার্থীরা বই পড়া এবং তাদের শেখা বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবে। এটি শুধু তাদের সাক্ষরতার আগ্রহকে উস্কে দেবে না, বরং তাদের মধ্যে একটা ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি করবে।
Conclusion
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে শিক্ষা কেবলমাত্র একটি অধিকার নয়, এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা আমাদের জীবন এবং সমাজকে বদলে দিতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, এই দিনটি উদযাপন করে আমরা আমাদের দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকার করতে পারি। শিক্ষা ও সাক্ষরতার মাধ্যমে সমাজের উন্নতি সম্ভব এবং সবার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।
চলুন, আমরা সকলে সাক্ষরতার প্রচারে আরও একধাপ এগিয়ে যাই। কারণ, সাক্ষরতার মাধ্যমে আমরা কেবল আমাদের জীবনকে নয়, অন্যদের জীবনকেও বদলাতে পারি।