" "

Dream BPT

আশুরার রোজার ফজিলত

আশুরার রোজা (১০ মহররম) ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ। এর ফজিলত সম্পর্কে কয়েকটি মূল পয়েন্ট নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
  1. গুনাহ মাফ: আশুরার রোজা পালন করলে পূর্ববর্তী বছরের ছোট গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। হাদিসে উল্লেখ আছে, আবু কাতাদা (রাঃ) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আশুরার রোজা, আমি আল্লাহর কাছে আশা করি এটি পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবে।” (সহীহ মুসলিম)
  2. ইতিহাসিক গুরুত্ব: এই দিনটি ইসলামী ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। নবী মুসা (আঃ) এবং তাঁর অনুসারীদেরকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এই দিনে।
  3. ইবাদতের গুরুত্ব: আশুরার দিনে বেশি বেশি ইবাদত, দান-সদকা এবং আল্লাহর জিকির করার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
  4. হাদিসে তাগিদ: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে, মুসলমানদের উচিত আশুরার দিনে রোজা রাখা। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি কখনও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এতো আগ্রহের সাথে একটি নির্দিষ্ট দিনের রোজা রাখার জন্য আগ্রহী হতে দেখি নাই, যেমনটি তিনি আশুরার রোজার জন্য আগ্রহী ছিলেন।” (সহীহ বুখারি)
আশুরা র রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং নিজের গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারি। তাই এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত।

আশুরার রোজা কয়টি, আশুরার রোজা

আশুরার রোজা মূলত একটি দিন, যা ১০ মহররমে রাখা হয়। তবে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র ১০ মহররমে রোজা রাখার পাশাপাশি ৯ মহররমকেও অন্তর্ভুক্ত করে দুই দিন রোজা রাখা উত্তম।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে অবশ্যই ৯ তারিখও রোজা রাখব।” (সহীহ মুসলিম)
সুতরাং, উত্তম হলো ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিন রোজা রাখা। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে শুধু ১০ মহররম রোজা রাখা যেতে পারে।

আশুরার রোজা কবে

আশুরার রোজা পালিত হয় ইসলামী চান্দ্র মাস মহররমের ১০ তারিখে। তবে, হিজরি ক্যালেন্ডার চান্দ্র চক্রের ওপর ভিত্তি করে হওয়ায় এটি প্রতি বছর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পড়ে।
২০২৪ সালে, আশুরার দিনটি পড়বে ১৭ জুলাই। তাই ৯ মহররমের রোজা হবে ১৬ জুলাই এবং ১০ মহররমের রোজা হবে ১৭ জুলাই।

আশুরার নামাজের নিয়ত

আশুরার দিনে বিশেষ কোনো নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ত নেই যা অন্য দিনের নামাজ থেকে আলাদা। তবে, যে নামাজই পড়া হোক না কেন, তার সঠিক নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
যদি আপনি সুন্নত বা নফল নামাজ পড়েন, তাহলে নিয়ত করতে পারেন এভাবে:

২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ত:

বাংলায়:”আমি ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ছি, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুখ কিবলামুখী করে।”
আরবীতে:”উসাল্লি রাকআ’তাইনি লিল্লাহি তা’আলা।”

২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত:

বাংলায়: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করছি।”
আরবীতে:”উসাল্লি রাকআ’তাইনি সুন্নতান লিল্লাহি তা’আলা।”
আল্লাহ আমাদের সকল ইবাদত কবুল করুন এবং আশুরার বরকত থেকে আমাদের সবাইকে উপকৃত করুন।

আশুরার ইতিহাস

আশুরা ইসলামী ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন এবং এটি ১০ মহররমে পালিত হয়। আশুরার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. হযরত মুসা (আঃ) ও বনী ইসরাইলের মুক্তি

আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আঃ) ও তাঁর অনুসারীদেরকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে এই দিনে মুক্তি দিয়েছিলেন। মুসা (আঃ) এবং বনী ইসরাইল এই দিনে রোজা রেখেছিলেন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই দিনটি পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন কারণ তিনি মুসা (আঃ)-এর অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন।

২. হযরত নুহ (আঃ)-এর নৌকার স্থির হওয়া

অনেকে বিশ্বাস করেন যে, হযরত নুহ (আঃ)-এর নৌকা মহা প্রলয়ের পর এই দিনে জুদি পাহাড়ে স্থির হয়েছিল।
৩. কারবালার ঘটনা
৬১ হিজরির ১০ মহররম তারিখে (৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে), ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং সহযোদ্ধারা কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। এ ঘটনা ইসলামী ইতিহাসে একটি অত্যন্ত শোকাবহ এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

৪. অন্যান্য ঘটনা

ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পাওয়া এবং হযরত আইউব (আঃ)-এর অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ উল্লেখযোগ্য।
আশুরার দিনটি তাই ইসলামী ইতিহাসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে জড়িত এবং মুসলমানরা এই দিনটিকে বিশেষভাবে স্মরণ করে এবং পালন করে।

আশুরা সম্পর্কে হাদিস

আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নিচে দেওয়া হলো:

১. পূর্ববর্তী বছরের গুনাহ মাফ

আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, আশুরার দিনে রোজা রাখা আগের বছরের গুনাহসমূহের কাফফারা হবে।”— (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)

২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আগ্রহ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি কখনো রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কোনো নির্দিষ্ট দিনের রোজা রাখার জন্য এতো আগ্রহী হতে দেখিনি, যতটা তিনি আশুরার রোজা রাখার জন্য ছিলেন।”— (সহীহ বুখারি, হাদিস: ২০০৬)

৩. মুসা (আঃ)-এর রোজা

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদিনায় এসে দেখলেন যে ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই রোজার তাৎপর্য কী? তারা বলল, ‘এটা একটি মহান দিন; এই দিনে আল্লাহ মুসা (আঃ) এবং তার সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে নিমজ্জিত করেছিলেন। তাই মুসা (আঃ) এই দিনে রোজা রেখেছিলেন।’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘তাহলে আমি মুসার (আঃ) সাথে তোমাদের চেয়ে অধিক সম্পৃক্ত।’ এরপর তিনি নিজে রোজা রাখলেন এবং সাহাবাদেরকে রোজা রাখার আদেশ দিলেন।”— (সহীহ বুখারি, হাদিস: ২০০৪)

৪. আশুরার দিনে রোজার আগে ও পরে একদিন রোজা রাখা

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আশুরার দিন রোজা রাখো এবং এর আগে বা পরে একটি দিন রোজা রাখো, ইহুদিদের সাথে ভিন্নতা প্রদর্শনের জন্য।”— (মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ২১৫৪)
এই হাদিসগুলো আশুরার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত স্পষ্টভাবে তুলে ধরে এবং মুসলমানদের এই দিনে রোজা রাখার জন্য উৎসাহিত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top