" "

Dream BPT

দূর্গা পূজা, হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান উৎসব, মা দুর্গার আবাহন এবং পূজার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। এটি শরতের ঋতুতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, দারুণ উদযাপন করা হয়। মায়ের নানা রূপে পূজা করা হয় এবং এই সময়ের আনন্দ উৎসবে মণ্ডপগুলো সাজানো হয়, ভক্তরা একত্রিত হয়ে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নেন।

দূর্গা পূজা ২০২৪

দূর্গা পূজা

দূর্গা পূজা ২০২৪:
দূর্গা পূজা—এই কয়েকটা শব্দেই যেন বাঙালির প্রাণ। প্রতি বছর আমরা অপেক্ষায় থাকি কখন আসবে সেই সময়, যখন ঢাকের বাদ্যি শুনে মনের মধ্যে আনন্দের ঢেউ খেলে যাবে। শৈশবে মনে পড়ে, ঠাকুর দেখতে বেরোবার আগে মাকে কেমন করে জ্বালাতন করতাম নতুন জামা পরার জন্য। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা, বন্ধুদের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে ফুচকা খাওয়া—এই স্মৃতিগুলোই তো পূজার মূল আকর্ষণ।
ষষ্ঠীর দিনটা যেন এক আলাদা উত্তেজনা নিয়ে আসে। আমরা মায়ের বোধন দেখি, মনে মনে মাকে আহ্বান করি—আসুন মা, এলো সময় আপনার পূজার। সপ্তমী থেকে পূজা শুরু, অষ্টমীতে দুপুরবেলা কুমারী পূজার সময়টা যেন এক অন্যরকম অনুভূতি দেয়। নবমীতে অঞ্জলি দেওয়ার পর ধুনুচি নাচে মাতোয়ারা হওয়ার দৃশ্যটা না দেখলে যেন পূজা অসম্পূর্ণ থাকে।
আর দশমীর সেই বিষাদের মুহূর্ত, যখন মা বিসর্জনের জন্য বেরিয়ে পড়েন। ছোটবেলায় সেই সময়টা খুব মন খারাপ লাগত। মনে হত মা যেন থেকে যান আরও কিছুদিন। কিন্তু এখন বুঝি, এই আসা-যাওয়াতেই তো জীবনের ছন্দ। মা আসবেন, মাকে বরণ করব, আবার বিদায় দেব—এই আবেগটাই তো দূর্গা পূজাকে এতটা কাছের করে তোলে আমাদের।
পূজা শুধু ঠাকুর দেখা নয়, এই সময়টাতে যেন চারপাশের সব কিছু একটু অন্যরকম হয়ে যায়। আলোর রোশনাই, প্যান্ডেলের নানান থিম, আর সবার মুখে একরাশ হাসি—এই মিলনই তো আমাদের বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসবটাকে এত স্পেশাল করে তোলে।

দূর্গা পূজা ২০২৪, দূর্গা পূজা ২০২৪ বাংলা কত তারিখ, 2024 সালের দূর্গা পূজার তারিখ, 2024 সালের দূর্গা পূজা কবে, দূর্গা পূজা ২০২৪ বাংলা কত তারিখ

২০২৪ সালে দুর্গা পূজা বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হবে আশ্বিন মাসে। তারিখগুলো নিম্নরূপ:
  • ষষ্ঠী: ১০ আশ্বিন, ১৪২৪ (১০ অক্টোবর, ২০২৪)
  • সপ্তমী: ১১ আশ্বিন, ১৪২৪ (১১ অক্টোবর, ২০২৪)
  • অষ্টমী: ১২ আশ্বিন, ১৪২৪ (১২ অক্টোবর, ২০২৪)
  • নবমী: ১৩ আশ্বিন, ১৪২৪ (১৩ অক্টোবর, ২০২৪)
  • দশমী: ১৪ আশ্বিন, ১৪২৪ (১৪ অক্টোবর, ২০২৪)
এগুলি বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দুর্গা পূজার মূল দিনগুলো।

2024 সালের দূর্গা পূজার সময়সূচী, দূর্গা পূজা ২০২৪ সময় সূচি, 2024 সালের দূর্গা পূজার সময়সূচী

২০২৪ সালের দূর্গা পূজার সময়সূচী নিম্নরূপ:
  1. মহালয়া:
    • ২ অক্টোবর, ২০২৪ (বুধবার)
       
      মহালয়া দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু হয় এবং এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেবী দূর্গার পৃথিবীতে আগমনের সূচনা হয়।
  2. ষষ্ঠী (বোধন):
    • ১০ অক্টোবর, ২০২৪ (বৃহস্পতিবার)
       
      এই দিন থেকে পূজা কার্যক্রম শুরু হয়, দেবীর বোধন এবং আমন্ত্রণ করা হয়।
  3. সপ্তমী:
    • ১১ অক্টোবর, ২০২৪ (শুক্রবার)
       
      দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও পূজা হয়।
  4. অষ্টমী:
    • ১২ অক্টোবর, ২০২৪ (শনিবার)
       
      এই দিনে কুমারী পূজা এবং সন্ধি পূজা করা হয়, যা দুর্গা পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন।
  5. নবমী:
    • ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ (রবিবার)
       
      মহা নবমীর পূজা হয়, এবং এই দিনেও ভক্তরা অঞ্জলি দেন।
  6. দশমী (বিসর্জন):
    • ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ (সোমবার)
       
      এই দিন দেবী দূর্গার বিসর্জন করা হয়, যা বিজয়া দশমী নামে পরিচিত।
এই পূজার দিনগুলোতেই মানুষ মিলিত হয়, আনন্দ করে এবং ভক্তিভরে দেবী দূর্গার পূজা করে।

2024 সালের দূর্গা পূজার সন্ধিপূজার সময়

২০২৪ সালের দুর্গা পূজার সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হবে অষ্টমীনবমী তিথির মিলন মুহূর্তে, অর্থাৎ অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমীর প্রথম ২৪ মিনিটের মধ্যে।
২০২৪ সালে, সন্ধি পূজার সময় নির্ধারিত হয়েছে:
  • ১২ অক্টোবর, ২০২৪ (শনিবার)
  • সময়: ০৬:৩৪ PM থেকে ০৭:২২ PM (ভারতীয় সময় অনুযায়ী)
সন্ধি পূজা খুবই বিশেষ কারণ এটি মহিষাসুরমর্দিনী রূপে দেবী দূর্গার শক্তি প্রকাশের প্রতীক।

দূর্গা পূজা রচনা

দূর্গা পূজা বাঙালির অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব, যা প্রতি বছর দেবী দূর্গার আরাধনা উপলক্ষে মহাসমারোহে পালিত হয়। এই উৎসব শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিফলন নয়, বরং একটি সামাজিক মিলনের অনুষ্ঠানও বটে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ওড়িশা সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অংশে এটি ধুমধাম করে পালিত হয়। দূর্গা পূজার আয়োজন শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিরাও একইভাবে পালন করে থাকেন।
দুর্গা পূজার প্রেক্ষাপট
দেবী দূর্গার আরাধনা মূলত অসুর মহিষাসুরের উপর তাঁর বিজয়কে কেন্দ্র করে। পুরাণ অনুসারে, মহিষাসুর নামে এক অসুর দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গ দখল করে। তখন দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, এবং মহেশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিন দেবতা তাদের সম্মিলিত শক্তিতে দেবী দূর্গাকে সৃষ্টি করেন, এবং তিনি মহিষাসুরকে পরাজিত করে পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই দূর্গা পূজা পালন করা হয়, এবং দেবী দূর্গা হয়ে ওঠেন শক্তির প্রতীক।
পুজোর আয়োজন:
দূর্গা পূজার মূল আয়োজন হয় ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত, কিন্তু এর প্রস্তুতি শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। প্যান্ডেল তৈরির কাজ, মূর্তি গড়ার জন্য কুমোরটুলিতে শিল্পীদের ব্যস্ততা—সবকিছুই উৎসবের উন্মাদনাকে বাড়িয়ে তোলে। ষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন হয়, এবং দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এরপর সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে চলে পূজা, আরতির আয়োজন, এবং ভক্তরা অঞ্জলি দেন। অষ্টমীর দিনে বিশেষ আকর্ষণ হল কুমারী পূজা এবং সন্ধি পূজা, যেখানে কুমারী মেয়েদের দেবীর রূপে পূজা করা হয়।
সামাজিক দিক:
দূর্গা পূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সময়ে বিভিন্ন পরিবার, বন্ধুবান্ধব মিলে আনন্দ করে, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা, নতুন পোশাক পরা, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করা—এসবই দুর্গা পূজার সময়ের সাধারণ চিত্র। যেমন, অষ্টমীর অঞ্জলির পর ধুনুচি নাচ আর ঢাকের তালে তালে নাচের যে দৃশ্যটা দেখা যায়, সেটাই তো পূজার উজ্জ্বল মুহূর্তগুলোর অন্যতম।
বিসর্জন ও বিজয়া দশমী:
পূজার শেষ দিন হল বিজয়া দশমী, যখন দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয়। এই সময় মানুষের মনে আনন্দ ও বিষাদের মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। ছোটবেলায় বিজয়া দশমীর সময় মা-বাবার সঙ্গে বিজয়া করতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো এখনও জ্বলজ্বল করে চোখে। দেবী দূর্গাকে বিসর্জনের মাধ্যমে তার বিদায় দেওয়া হয়, কিন্তু বিজয়া দশমী আমাদের শেখায়, প্রতিটি বিদায়ই নতুন শুরু নিয়ে আসে।
উপসংহার
দূর্গা পূজা বাঙালির জীবনে একটি বিশেষ উৎসব। এটি কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সামাজিকতার এক মেলবন্ধন। দেবী দূর্গার শক্তি ও মঙ্গলকে কেন্দ্র করে আমরা যেমন পূজা করি, তেমনি এই সময় আমরা মিলিত হই, হাসি, আনন্দ করি এবং নতুন উদ্দীপনা নিয়ে জীবনের পথ চলা শুরু করি।

দূর্গা পূজার ক্যাপশন

১. মা এসেছে, এসেছে আনন্দ! এই দূর্গা পূজায় মায়ের আশীর্বাদে কাটুক সব বাধা।
২. মায়ের কাছে আমরা সবাই সমান, এই পূজায় ছড়িয়ে পড়ুক সমতার আলো।
৩. শুভ বিজয়া! মায়ের ভালোবাসায় ভরে উঠুক আমাদের সকলের মন।
৪. ঢাকের বাদ্যি, আলোর ঝলকানি, মায়ের আগমনে ভরে উঠুক চারপাশের আকাশ।
৫. দূর্গা পূজায় মাকে বরণ করে নিন, নতুন পথে এগিয়ে যাক জীবন।
৬. মায়ের শক্তিতে জাগুক মন, কাটুক জীবনের সব আঁধার।
৭. পুজোর আনন্দে, বন্ধুত্বের বন্ধনে, আসুন সবাই মিলি একসাথে।
৮. মায়ের শক্তি আমাদের দিক নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
৯. এলো মা, এলো পূজা, এলো আমাদের জীবনে খুশির আগমন।
১০. এই দূর্গা পূজায়, নতুন আশার আলো নিয়ে শুরু হোক নতুন অধ্যায়।

দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা বার্তা

১. শারদীয় দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা! মায়ের আশীর্বাদে আপনার জীবন হোক সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধিতে ভরপুর।
২. মা দূর্গার আগমনে আপনার জীবনে আসুক নতুন আশা, শক্তি, এবং আনন্দের স্রোত। শুভ দুর্গা পূজা!
৩. মায়ের চরণে প্রণাম। তিনি আপনার জীবনে সমস্ত বাধা দূর করে মঙ্গলময় করুক। শুভ শারদীয়া!
৪. মায়ের আশীর্বাদে কাটুক সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা, দূর্গা পূজার এই সময়ে আনন্দে ভরে উঠুক আপনার দিন। শুভেচ্ছা রইল!
৫. মা দূর্গার কৃপায় আপনার পরিবারে আসুক সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি। শুভ দুর্গোৎসব!
৬. মায়ের শক্তি আমাদের সকলের মনকে নতুন আশায় উজ্জীবিত করুক। শারদীয় শুভেচ্ছা!
৭. মা দূর্গার মঙ্গলময় উপস্থিতিতে আপনার জীবন হোক আলোকিত। শুভ দুর্গা পূজা!
৮. এই দূর্গা পূজায় মা দূর্গা আপনার জীবন থেকে সব অশান্তি দূর করে সুখের আলোয় ভরিয়ে দিন। শুভেচ্ছা রইল।
৯. মায়ের কাছে প্রার্থনা, তিনি আপনার জীবনকে আনন্দ, শক্তি, এবং সফলতায় পূর্ণ করুন। শুভ দুর্গা পূজা!
১০. দূর্গা পূজার এই পবিত্র উৎসবে আপনার হৃদয় আনন্দে ভরে উঠুক, এবং জীবন হোক মঙ্গলময়। শুভ শারদীয়া!

দূর্গা পূজা প্রথম কে করেন

দূর্গা পূজার প্রবর্তনের ইতিহাস পুরাণসমূহে পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে সাধারণভাবে মন্দিরের পুরাণ অনুযায়ী, প্রথম দূর্গা পূজা হয়েছিল রাজা শশাঙ্কের সময়, যিনি ৭ম শতাব্দীর বঙ্গদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজা ছিলেন। তার পরে অনেক রাজা এবং রাজবংশ বিভিন্ন স্থানীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দূর্গা পূজা পালনের প্রচলন শুরু করেন।
বর্তমানে, দূর্গা পূজা মূলত পশ্চিমবঙ্গের একটি সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়। কলকাতার জমিদারির পরিবারগুলো, বিশেষ করে ঠাকুরবাড়ি, যেমন ভিক্রম চন্দ্রের সময়ে (১৮ শতক) দূর্গা পূজা একটি বৃহৎ আকারে পালিত হতে শুরু করে। তারা মাকে বরণ করে সারা মাস ধরে নানা রকম উৎসব এবং অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন, যা আজকের আধুনিক দূর্গা পূজার রূপ নিয়েছে।
সুতরাং, যদিও প্রাচীনকালে দূর্গা পূজার শুরুতে বিভিন্ন ব্যক্তির অবদান রয়েছে, তবে এটি মূলত মন্দিরের এবং জমিদারদের দ্বারা পালিত হওয়ার কারণে একটি জনপ্রিয় ও প্রচলিত উৎসবে পরিণত হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top