Table of Contents
Toggleসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন কে ছিলেন: রচনা, জন্ম, মৃত্যু, 2 টি Best বই
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন কে ছিলেন, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ভারতের উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাধাকৃষ্ণন তার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন যা তাকে ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এবং দার্শনিক চিন্তাধারায় বিশেষ স্থান দিয়েছে।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন জন্মদিন
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ সাল। তার সম্মানে, ভারতে প্রতি বছর ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস (Teacher’s Day) হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তাদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে উদযাপিত হয়। রাধাকৃষ্ণন নিজেও একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষকরা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই তার জন্মদিনকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি সুন্দর উপায়।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন মৃত্যু
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ১৭ই এপ্রিল, ১৯৭৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে ভারতীয় দর্শন, শিক্ষা এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি যুগের অবসান ঘটে। রাধাকৃষ্ণনের জীবন ও কর্ম আজও শিক্ষাবিদ, দার্শনিক এবং ছাত্রদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। তার শিক্ষা, দার্শনিক চিন্তাধারা, এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবদান ভারতের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রেখেছে।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন রচনা, সবপললী রাধাকৃষ্ণন রচনা
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন: একজন দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক
প্রারম্ভিকা
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ছিলেন ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং রাষ্ট্রনায়ক। তার জীবন ও কর্ম একদিকে ভারতীয় শিক্ষার মান উন্নয়নে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক দার্শনিক মহলে ভারতীয় দর্শনের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। তিনি ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ভারতের উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্মদিন ৫ই সেপ্টেম্বর ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
রাধাকৃষ্ণন ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ সালে তামিলনাড়ুর তিরুত্তানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সর্বপল্লী বীরস্বামী এবং মাতার নাম সীতাম্মা। তিনি তিরুপতি এবং ভেলোরের মিশনারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরে তিনি মাদ্রাজ ক্রিশ্চান কলেজ থেকে বিএ এবং এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পড়াশোনার বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল দর্শনশাস্ত্র এবং ধর্মতত্ত্বে।
শিক্ষক ও দার্শনিক হিসেবে কর্মজীবন
রাধাকৃষ্ণন তার কর্মজীবন শুরু করেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনের প্রভাষক হিসেবে। পরে তিনি মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্য ধর্মতত্ত্বের স্পাল্ডিং অধ্যাপক হিসেবেও নিযুক্ত হন। তার দার্শনিক কাজ বিশেষ করে ভারতীয় দর্শন এবং পশ্চিমা দর্শনের মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করার প্রচেষ্টা করে।
রাধাকৃষ্ণনের বিখ্যাত কিছু বইয়ের মধ্যে রয়েছে “ইন্ডিয়ান ফিলোসফি,” “দ্য ফিলোসফি অব উপনিষদস,” এবং “ইস্টার্ন রিলিজিয়নস অ্যান্ড ওয়েস্টার্ন থট।” তার কাজ ভারতীয় দর্শনের মূল ধারণাগুলি পশ্চিমা বিশ্বে প্রচারিত করে এবং তাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে।
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবদান
রাধাকৃষ্ণন ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৯৬২ সালে দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন, তিনি শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং শিক্ষকদের সম্মানিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার জন্মদিন ৫ই সেপ্টেম্বর ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়, যা তার শিক্ষাবিদ হিসেবে অবদানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
উপসংহার
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি তার দার্শনিক এবং শিক্ষাগত কাজের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং দর্শনের সমৃদ্ধি বাড়িয়েছেন। তার রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে অবদান তাকে ভারতীয় ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। তিনি একজন দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সর্বদাই শ্রদ্ধার পাত্র হবেন।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর লেখা দুটি বই
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তার জীবদ্দশায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই রচনা করেছেন, যেগুলি ভারতীয় দর্শন এবং ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে বিশেষ স্থান অধিকার করে। তার লেখা দুটি বিখ্যাত বই হলো:
- “Indian Philosophy”: এই বইটি দুই খণ্ডে বিভক্ত এবং এটি ভারতীয় দর্শনের ইতিহাস ও বিকাশ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করে। রাধাকৃষ্ণন এই বইটিতে প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দার্শনিক ধারার উদ্ভব এবং বিকাশের বিবরণ দিয়েছেন। ভারতীয় দর্শনের মূল ধারণাগুলি এবং তাদের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা এই বইটিকে একটি মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
- “The Philosophy of the Upanishads”: রাধাকৃষ্ণন এই বইয়ে উপনিষদগুলির দার্শনিক ভিত্তি এবং তাদের প্রধান বার্তাগুলি বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি উপনিষদগুলির আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক ধারণাগুলির বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন এবং পাঠকদের সেই ধারণাগুলির গভীরতা এবং জটিলতা সম্পর্কে অবগত করেছেন। উপনিষদগুলির মধ্যে নিহিত দার্শনিক ধারণাগুলির ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ এই বইটিকে একটি মূল্যবান গ্রন্থে পরিণত করেছে।
এই বইগুলি রাধাকৃষ্ণনের দার্শনিক এবং শিক্ষাগত কাজের প্রতিফলন এবং ভারতীয় দর্শনের ক্ষেত্রে তার অবদানের সাক্ষ্য বহন করে।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর বাণী, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বাণী
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন একজন প্রখ্যাত দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন, এবং তার অনেক বাণী মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। তার কয়েকটি বিখ্যাত বাণী নিম্নে দেওয়া হলো:
- সত্যিকারের শিক্ষকরা হলেন তারা, যারা আমাদের নিজে চিন্তা করতে সহায়তা করেন।
- বই হলো সেই সেতু যা আমাদের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
- জ্ঞান এবং বিজ্ঞানই হলো সেই ভিত্তি যার ওপর আনন্দময় এবং সুখী জীবন নির্মাণ করা সম্ভব।
- শিক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল হওয়া উচিত এমন একজন স্বাধীন ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তি, যে ইতিহাসের বাঁকবদল এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে লড়াই করতে পারে।
- যখন আমরা মনে করি যে আমরা সব জানি, তখনই আমাদের শেখার প্রক্রিয়া থেমে যায়।
- ধর্ম হলো আচরণ, শুধুমাত্র বিশ্বাস নয়।
এই বাণীগুলি রাধাকৃষ্ণনের দার্শনিক ও শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন এবং তাদের মধ্যে নিহিত গভীর অর্থ মানুষকে শিক্ষার প্রকৃত মূল্য বোঝাতে সহায়ক।