" "

Dream BPT

গুরু পূর্ণিমা হিন্দু পঞ্চাঙ্গের অনুযায়ী শ্রাবণ  মাসের পূর্ণিমা দিনে পালন করা হয়। এই তারিখে গুরুদেব পূজা করা হয় ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়।

গুরু পূর্ণিমা 2024

গুরু পূর্ণিমা কি, গুরু পূর্ণিমা তিথি, গুরু পূর্ণিমা

গুরু পূর্ণিমা হলো হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের একটি প্রধান উৎসব যা গুরুদেব রূপে প্রতিষ্টিত। এই উৎসবের ধারা গুরুদেবের প্রতি অর্পণ এবং প্রকাশ করা হয়। এই উৎসবটা প্রায় ভারতের সমস্ত রাজ্যর সমুহ এলাকাতে উল্লেখযোগ্য ও মানযোগ্য উৎসব হিসাবে পরিচিত।

গুরু পূর্ণিমা কবে, গুরু পূর্ণিমা 2024, গুরু পূর্ণিমা ডেট এন্ড টাইম

2024 সালে গুরু পূর্ণিমা উৎযাপন এর তারিখ হলো 21 জুলাই (রবিবার)। গুরু পূর্ণিমা পালনের জন্য প্রায় সকালে আরম্ব হয় পূর্ণিমা তিথি। আর সন্ধ্যার টাইম কিছু জাগায় উৎসব অনুষ্টিত করা হয়। তার মধ্যে গুরুদেবের পূজা ও গুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধাঘ্য অর্পণ করা হয়।

গুরু পূর্ণিমা কেন হয়

গুরু পূর্ণিমা হলো একটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের পবিত্র উৎসব যা গুরুদের সন্মান জানানোর জন্য পালন করা হয়। “গুরু” শব্দটি মানে শিক্ষক বা গাইড, এবং “পূর্ণিমা” মানে পূর্ণ চাঁদ। এই উৎসবটি হিন্দু ক্যালেন্ডারের আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়।
 
গুরু পূর্ণিমার কারণ:
গুরু ব্যাসের জন্মদিন: মহর্ষি ব্যাসের জন্মদিনে গুরু পূর্ণিমা বিশেষভাবে পালন করা হয়। মহাভারত ও অনেক পুরাণ রচনা করেছিলেন ব্যাসদেবে । তাঁকে গুরুদের গুরু হিসেবে সম্মানিত করা হয় হিন্দু ধর্মতে।
 
গুরুদের প্রতি সন্মান জানানো: গুরুদের প্রতি সন্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন হলো গুরু পূর্ণিমা। ছাত্ররা নিজের গুরুদের জন্য শ্রদ্ধা ও সন্মান জানায় এবং তাঁদের আশীর্বাদ লাভ করে।
 
আধ্যাত্মিক উন্নতি: গুরু পূর্ণিমা আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং উন্নতির দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দিনটিতে গুরুরা তাঁদের ছাত্রদের নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেন।

গুরু পূর্ণিমা কি করা উচিত

এই দিনে কিছু বিশেষ অনুষ্ঠান ও কাজ করা উচিত যা গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তি প্রতিফলিত করে। নিম্নতে কিছু সাধারণ প্রথা এবং আচার-অনুষ্টান উল্লেখ করা হয়েছে:
 
গুরু পূর্ণিমায় কি করা উচিত:
  1. গুরুর পূজা এবং অর্চনা: গুরুর চরণে পুষ্প, ফল, মিষ্টি ও অন্যান্য উপহার পেরন করা। গুরুর কাসে থাকি আশীর্বাদ নেওয়া ও তাঁকে প্রণাম করা।
  2. আধ্যাত্মিক চর্চা: ধর্মীয় গ্রহ পড়া ও পাঠ করা, ধ্যান জপা এবং প্রাথনা করা।
  3. সাধু এবং গুরুদের সাথে সাক্ষাৎ: আধ্যাত্মিক গুরু বা ধর্মীয় শিক্ষককের পাছে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা এবং তাঁদের আশীর্বাদ গ্রহণ করা। আধ্যাত্মিক পরামর্শ ও আলোচনা শোনার চেষ্টা করা।
  4. দানের কার্যক্রম:গরিব এবং অভাবী মানুষকে সাহায্য করা, ধর্মীয় প্রতিষ্টান বা আশ্রমে দান করা।
  5. ভক্তিমূলক অনুষ্টান: ভজন, কীর্তন এবং গানের ধারা গুরুর কৃতজ্ঞতা করা, ধর্মীয় সভা এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করা।
  6. উপহার প্রদান: গুরকে আধ্যাত্মিক বই বা অন্যান উপহার প্রদান করা।
  7. আত্মবিশ্লেষণ: নিজের জীবনের উদ্দেশ্য এবং আধ্যাত্মিক লক্ষ্য নিয়ে ভাবা চিন্তা করা, কিভাবে গুরুর শিক্ষাকে প্রকৃত জীবনে বাস্তবায়িত করা যায় তা নিয়ে ভাবা।

গুরু পূর্ণিমার মাহাত্ম্য

গুরু পূর্ণিমার মাহাত্ম্য বা গুরুত্ব হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে বিশেষ অতুলনীয়। এই দিনটা গুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশের জন্য নিবেদিত। গুরু পূর্ণিমার আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক মহাত্ম্য খুব গভীর।
 
গুরু পূর্ণিমার মাহাত্ম্য কিছু উল্লেখ করা হলো নিম্নতে :
  1. গুরু শিষ্যের সম্পর্ক: গুরু পূর্ণিমা গুরু এবং শিষ্যের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি সেই বিশেষ দিন যেদিন শিষ্যেরা তাঁদের গুরুর প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতা এবং সন্মান প্রকাশ করে। গুরুর আশীর্বাদ নিয়ে শিষ্যেরা তাঁদের আধ্যাত্মিক, নৈতিক এবং ব্যাক্তিগত উন্নতির পথে আগে বাড়ন।
  2. মহর্ষি ব্যাসের জন্মদিন: গুরু পূর্ণিমা মহর্ষি ব্যাসের জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। মহর্ষি ব্যাস মহাভারত, বেদ এবং পুরাণের রচয়িতা এবং হিন্দু ধর্মে তাঁকে বিশেষ শ্রদ্বার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তাঁকে সব গুরুদের গুরু হিসেবে মানা হয়।
  3. আধ্যাত্মিক পরিবর্তন: আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো গুরু পূর্ণিমা। এই বিশেষ দিনে ছাত্ররা গুরু কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের জন্য গুরুর উপদেশ অনুসরণ করেন।
  4. প্রথম উপদেশের দিন: বৌদ্ধ ধর্মে, বিশেষভাবে এই দিনটি স্মরণ করা হয় কারণ এই দিনেই গৌতম বুদ্ধ তাঁর প্রথম উপদেশ প্রদান করছিলেন।”ধর্মচক্র প্রবর্তন” নামে এটি পরিচিত।
  5. আচার্য ঋষভদেবের সন্মান: গুরু পূর্ণিমা আচার্য ঋষভদেবের স্মরণে এবং সম্মানে পালিত হয় জৈন ধর্মে, যিনাকি প্রথম তীর্থঙ্কর হিসেবে জানা যায়।
  6. নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষা: এই দিনটিয়ে নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব বুঝায়। গুরুরা তাদের ছাত্রদেরকে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেন।
আচার- অনুষ্ঠান:
পূজা এবং অর্চনা- গুরু পূজা করা, অর্চনা ও তাঁদের চরণে পুষ্পমালা প্রদান করা।
ধ্যান এবং প্রার্থনা: গুরুর আশীর্বাদ এবং উপদেশ নিয়ে প্রার্থনা এবং ধ্যান করা।
দান এবং সেবা: দরিদ্র ও গরিব মানুষদের দান করা এবং সেবা করা। এই দিনে দরিদ্রদের জন্য সহানুভূতিশীল হওয়া।
ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান: ভজন, কীর্তন ও অন্যান ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা।
 
গুরু পূর্ণিমার মাহাত্ম্য তাই গুরুর প্রতি সন্মান, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি গুরু এবং শিষ্যের মধ্যে আধ্যাত্মিক এবং মানবিক সম্পর্কের গভীরতা এবং গুরুত্বকে উদযাপন করে।

গুরু পূর্ণিমা পালনের নিয়ম

গুরু পূর্ণিমা পালনের নিয়মগুলি হলো:
 
1. প্রভাতে স্মান- পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা।
2. গুরু পূজা- গুরুর প্রতিমা বা ছবির সামনে ধূপ, দীপ, ফুল, ফল, মিষ্টি নিবেদন করা।
3. মন্ত্র পাঠ- গুরু মন্ত্র বা স্তোত্র পাঠ করা।
4. আধ্যাত্মিক আলোচনা- গুরুর উপদেশ শোনা এবং আলোচনা করা।
5. কীর্তন এবং ভজন- ভক্তিমূলক গান গাওয়া ও কীর্তন এবং ভজন করা।
6. দান ও সেবা- দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য এবং বস্ত্র বিতরণ করা।
7. গুরুর সাথে সময় কাটানো- গুরুর আশীর্বাদ এবং দীক্ষা গ্রহণ করা।

গুরু পূর্ণিমা সময়সূচি, গুরু পূর্ণিমা 2024 সময়সূচি

2024 সালে গুরু পূর্ণিমা 21 জুলাই তারিখে পালিত হবে। এই নিদিষ্ট দিনে গুরু পূর্ণিমা তিথি থাকবে ও এই তিথি অনুযায়ী পূজা এবং অন্যান ধর্মীয় আচার- অনুষ্ঠান পালিত করা হয়।
 
2024 সালের গুরু পূর্ণিমার সময়সূচি নিম্নে দেওয়া হলো:
 পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে- 20 জুলাই 2024, রাত 9:10 PM মিনিটে 
 পূর্ণিমা তিথি শেষ হবে- 21 জুলাই 2024, রাত 10:30 PM মিনিটে
 
গুরু পূর্ণিমার অনুষ্ঠানের সময়সূচি:
1. প্রভাত- (সকাল 5:00- 6:00) প্রভাতে স্মানে ও পূজার প্রস্ততি।
2. গুরু পূজা- (সকাল 6:00- 8:00) গুরুর পূজা, ধূপ, দীপ, পুষ্প, ফল নিবেদন।
3. মন্ত্র পাঠ- (সকাল 8:00 – 9:00) গুরু মন্ত্র ও স্তোত্র পাঠ।
4. ভজন ও কীর্তন- (সকাল 9:00- 11:00) ভক্তিমূলক গান এবং কীর্তন।
5. আধ্যাত্মিক আলোচনা- (বেলা 11:00- দুপুর 1:00) গুরুর উপদেশ শোনা এবং আলোচনাত জড়িত হওয়া।
6. দান ও সেবা- দুপুর 1:00- বিকেল 3:00) গরিবদের মধ্যে খাদ্য এবং বস্ত্র বিতরণ।
7. গুরুর সাথে সময়- (বিকেল 3:00- সন্ধ্যা 6:00) গুরুর সাথে সময় কাটানো এবং দীক্ষা গ্রহণ।
8. ধ্যান এবং প্রার্থনা- (সন্ধ্যা 6: 00- রাত 8:00) ধ্যান এবং প্রার্থনা করে দিনটা শেষ।
 
আপনি গুরু পূর্ণিমার পূজা এবং আচার- অনুষ্ঠান সুন্ধরভাবে পালন করতে পারেন এই সময়সূচি অনুসরণ করে। স্থানীয় পঞ্জিকা বা ধর্মীয় উপদেষ্টার সাথে পরামর্শ করে নিদিষ্ট সময়সূচি নিধার্রণ করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top