" "

Dream BPT

আষাঢ়ী পূর্ণিমা 2024

আষাঢ়ী পূর্ণিমা ২০২৪ কবে, আষাঢ়ী পূর্ণিমা কবে

আষাঢ়ী পূর্ণিমা 2024 সালে 21 জুলাই তারিখে পালিত হবে। আষাঢ়ী পূর্ণিমার তিথি আরম্ভ হবে 20 জুলাই বিকেল থেকে এবং শেষ হবে 21 জুলাই বিকেলে।

আষাঢ়ী পূর্ণিমা কি, আষাঢ়ী পূর্ণিমা কাকে বলে

আষাঢ়ী পূর্ণিমা 2024

আষাঢ়ী পূর্ণিমা হয়েছে বাংলা ক্যালেন্ডারের আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথি, যেটা মূলত প্রতি বছর জুন বা জুলাই মাসে পড়ে। এটা হলো বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসবে গৌতম বুদ্ধ তার প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন দেন।

বৌদ্ধ মানুষরা এই দিনে বিশেষ পূজা, ধর্মীয় অনুষ্টান, ধর্মীয় আলোচনা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় কায্যকলাপ করেন। এটি বিশেষ করে থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভারত এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলিতে পালিত হয়। এই দেশগুলার শহর-নগর সব এলাকাতে অনেক জাকঁজমকতারে উদযাপিত করা দেখা যায়।

আষাঢ়ী পূর্ণিমার তাৎপয্য, আষাঢ়ী পূর্ণিমা তাৎপয্য

আষাঢ়ী পূর্ণিমা

আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনটা বৌদ্ধ ধর্মর মানুষের জন্য এক বিশেষ দিন। এই উৎসবটা বুদ্ধের প্রথম দর্মদেশনার ধর্মচক্র প্রবর্তন দিন হিসাবে উদযাপিত হয়। এই পূর্ণিমার তাৎপয্য সম্পর্কে নিম্নতে আলোচনা করা হোলো:

  1. ধর্মচক্র প্রবর্তন:

গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পর এই দিনেই তার প্রথম পাঁচজন শিষ্যকে সারনাথে প্রথম দর্মদেশনা দেন। এই দেশনা ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র নামে জানাজায় ও এটি বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে পরিচিত।

  1. আষাঢ়ী পূর্ণিমা এবং সন্ন্যাসীরা: এই উৎসবে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সাধারণত তাদের বর্ষাবাসের শুরু করেন, যা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে শুরু হয়ে অশ্বিনী পূর্ণিমা পযন্ত চলে। এই সময়ে সন্ন্যাসীরা একটি নিদিষ্ট স্থানে থেকে  ধর্মচর্চা এবং সাধনা করেন।
  2. উৎসব এবং পূজা:

এই দিনটিতে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে বিশেষ পূজা, ধর্মীয় আলোচনা ও অনেক ধরণের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনটা একটা পবিত্র ও ফুর্তিময় দিন হিসেবে উদযাপিত হয়।

  1. আঞ্চলিক উদযাপন:

এই উৎসবটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অঞ্চলেতে পালিত হয়। বিশেষ করে যত দেশে বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ রয়েছে তত দেশে এই উৎসবটা অনেক ধুমধামের সাথে পালিত করা হয়। 

আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মের মানুষদের জন্য ধ্যান, প্রার্থনা ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে ধর্মচর্চার একটি বিশেষ দিন বা উৎসব বা সময়।

আষাঢ়ী পূর্ণিমার কায্যকলাপ, আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনে কি কি করা উচিত

আষাঢ়ী পূর্ণিমার করণীয় কায্যকলাপর বিষয়গুলো নিম্নতে দেওয়া হলো:

  1. বিশেষ পূজা এবং প্রার্থনা: বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে বিশেষ পূজা ও প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা উচিত। এতে বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয় এবং ধর্মচক্র প্রবর্তন উৎসব হিসেবে উদযাপন করা হয়।
  2. ধর্মগ্রন্থ পড়া: এই দিনে বুদ্ধের উপদেশ ও শিক্ষা সংবলিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা উচিত। এতে বুদ্ধের শিক্ষার প্রতি আরও ভালোভাবে অবগত হওয়া যায় এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন হয়।
  3. ধ্যান ও ধ্যানচর্চা: আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে ধ্যান ও ধ্যানচর্চার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এটি মানসিক শান্তি, সুস্থতা এবং স্থিতি  আনতে সহায়ক হয়।
  4. দানধ্যান: এই উৎসবের দিনে দানধ্যান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কায্য। গরিব এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করাটা খুব ভালো
  5. ধর্মীয় আলোচনা ও শ্রবণ: এই দিনে মন্দিরে ধর্মীয় আলোচনা ও শিক্ষণ শ্রবণে অংশগ্রহণ করা উচিত। এতে বুদ্ধের শিক্ষার উপর আলোচনা হয় এবং ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
  6. বর্ষাবাস শুরু: বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এই দিন থেকে বর্ষাবাস শুরু করেন। তারা নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে ধর্মচর্চা ও সাধনায় সময় ব্যয় করেন।
  7. সামাজিক ও সম্প্রদায়ভিত্তিক কার্যক্রম: আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে সামাজিক ও সম্প্রদায়ভিত্তিক কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। এতে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে ধর্মচর্চা করা হয় এবং ঐক্য বৃদ্ধি পায়।
  8. পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা: মন্দির ও নিজের আশপাশের পরিবেশ পরিস্কার রাখা উচিত। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

এই কার্যকলাপগুলো আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিন পালন করা হলে তা আধ্যাত্মিক উন্নতি ও সামাজিক একতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মে কেন গুরুত্বপূর্ণ

আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:

  1. ধর্মচক্র প্রবর্তন: আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিন গৌতম বুদ্ধ তার বুদ্ধত্ব লাভের পর প্রথমবারের মতো ধর্মদেশনা দিয়েছিলেন। তিনি বেনারসের সারনাথে পাঁচজন শিষ্যকে এই দেশনা দেন, যা ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র নামে পরিচিত। এই শিক্ষায় তিনি চার আর্যসত্য (দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখের নিরোধ, এবং দুঃখ নিরোধের পথ) এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গের উপর আলোকপাত করেন। এটি বৌদ্ধ ধর্মের মূল শিক্ষার সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
  2. বর্ষাবাসের শুরু: আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে বর্ষাকালে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে তিন মাসের জন্য বর্ষাবাস শুরু করেন। এই সময়ে তারা ধ্যান, প্রার্থনা এবং ধর্মচর্চায় লিপ্ত হন। বর্ষাবাস বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আত্ম-অনুশাসন এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।
  3. বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মিলন: আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষজন মন্দিরে একত্রিত হয়ে বিশেষ পূজা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। এটি ধর্মীয় ঐক্য এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়।
  4. দানধ্যান ও পূজা: আষাঢ়ী পূর্ণিমা দিনটি দানধ্যান এবং পূজা-অর্চনার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বৌদ্ধরা এই দিনে দান করেন, যা তাদের জন্য পুণ্যের কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই কারণগুলো আষাঢ়ী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র করে তুলেছে। এই দিনে বৌদ্ধ সম্প্রদায় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বুদ্ধের শিক্ষা এবং আদর্শের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top